Facebook Ad Policy

ফেসবুক অ্যাড পলিসি সম্পর্কে কেন জানবেন?

কয়েক মাস আগে মালায়শিয়ার Lungkawi থেকে সিটিতে আসার জন্য একটি ফ্লাইট বুক করেছিলাম। এয়ারপোর্টে গিয়ে পরলাম মহা বিপদে। দেখি আমাদের ফ্লাইটের সাথে লাগেজ এর অপশননেই, শুধু হ্যান্ড ক্যারি নেয়া যাবে। এদিকে আমাদের সাথে বড় বড় তরতাজা দুটি লাগেজ। এবং প্লেইন বোর্ডিং এর সময় ১০ মিনিটের মত হাতে আছে। অন্য কোন উপায় না পেয়ে দুইটি লাগেজের একটা মোটা অঙ্কের টাকা অতিরিক্ত দিয়ে সেগুলো প্লেইনে ওঠানো সম্ভব হয়েছিল। এই ঘটনাটা কেন বললাম জানেন? অনেকেই অনলাইন বিজনেস শুরু করে, অনলাইন বিজনেস এর নিয়ম না জেনেই। যেহেতু ফেসবুক অনলাইন বিজনেস এর প্রচারের অন্যতম একটি মাধ্যম, এই প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করার আগে অবশ্যই এর নিয়ম কানুন জেনে নামা উচিত। নাহলে আমার মত ভুল করতে হবে, দিতে হবে অনেক রকমের মাশুল। আসেন জেনে নেই, ফেসবুক অ্যাড পলিসি সম্পর্কে না জানলে কি কি মাশুল দিতে হতে আপনাকে।

১। অ্যাড রিজেক্ট হওয়াঃ

ফেসবুক এর অ্যাড পলিসি হচ্ছে মূলত নিশ্চিত করে প্রতিটি পেইজ গুণগত মানসম্পন্ন অ্যাড যেন ফেসবুকে দেয়। এমন কোন প্রোডাক্ট, সেবা, ভাষা, ছবি বা ভিডিও যেন ব্যবহার না করা হয় যেটা শোভনীয় নয় বা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। অর্থাৎ যে অ্যাড ফেসবুকের পলিসি অনুযায়ী দেয়া হবে না, সেই অ্যাড ফেসবুক রিজেক্ট করে দিবে। রিজেক্ট করে দেয়ার অর্থ হল, এই ছবি, ভিডিও, লেখা ব্যবহার করে এই অ্যাড আর দেয়া যাবে না, যদি বার বার দেয়, বার বার রিজেক্ট করবে। অর্থাৎ ফেসবুকে সঠিকভাবে অ্যাড দেয়ার জন্য আপনার অবশ্যই অ্যাড এর পলিসি জানতে হবে, যদি না জেনে অ্যাড দেন সেক্ষেত্রে আপনার অ্যাড রিজেক্ট হবে। অল্প পরিমাণে অ্যাড রিজেক্ট হলে সেটা সহনীয়, কিন্তু অনেক পরিমাণে অ্যাড রিজেক্ট ডেকে আনতে পারে বিপত্তি। কি বিপত্তি? পরের পয়েন্টটা দেখুন।

২। পেইজ রেস্ট্রিক্টেশনঃ

পেইজ রেস্ট্রিকশন হওয়া মানে, আপনি ঐ ফেসবুক পেইজ দিয়ে সব কিছু করতে পারবেন, শুধু অ্যাড দিতে পারবেন না। পোস্ট করতে পারবেন, ম্যাসেজ দিতে পারবেন, লাইভে আসতে পারবেন কিন্তু অ্যাড বা বুস্ট দিতে পারবেন না।

একটা পেইজ রেস্ট্রিক্টেড হওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে অনেক বেশী পরিমাণ অ্যাড রিজেক্ট হওয়া। মনে করেন আপনি নতুন ফেসবুক পেইজ খুলেছেন এবং আপনি ফেসবুক অ্যাড পলিসি সম্পর্কে না জেনেই মনের মাধুরি মিশিয়ে অনেকগুলো অ্যাড দেয়ার চেষ্টা করলেন, বার বার একই ভুল করতে থাকলেন, এতে করে আপনার পেইজ রেস্ট্রিক্টেড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

শুধু তাই নয়, আমরা যেহেতু অনেক ক্লায়েন্ট নিয়ে কাজ করি, এরকম অনেককে পেয়েছি লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রডাক্ট ষ্টক করেছে, অথচ ঐ ধরণের প্রোডাক্ট ফেসবুকে সেল করাই অ্যালাউড না! যদি তারা ফেসবুক এর পলিসি জেনে ব্যবসা শুরু করত, তাহলে এই দিন তাদের দেখা লাগত না।

এছাড়াও, অনেকের বার বার লম্বা সময় ধরে অনেক পরিমাণ অ্যাড রিজেক্ট হওয়াতে রেস্ট্রিক্টেড হয়ে গিয়েছে তিলে তিলে গড়ে তোলা পেইজগুলো।

৩। অ্যাড অ্যাকাউন্ট ডিসাবেল

প্রতিটি ফেসবুক পেইজ একটি অ্যাড অ্যাকাউন্টের সাথে লিংক করা থাকে অটো। যখন পেইজের অ্যাড রিজেক্ট হয়, সেটার প্রভাব গিয়ে পরে পেইজের উপর এবং অ্যাড অ্যাকাউন্টের উপর।

বার বার এবং বেশী পরিমাণে যখন কোন অ্যাড অ্যাকাউন্টের সাথে যুক্ত থাকা পেইজে অ্যাড রিজেক্ট হতে থাকে তখন সেটা সেই অ্যাড অ্যাকাউন্টের হেলথ এর জন্য খারাপ। যদি এটার পরিমাণ বেড়ে যায় তখন অ্যাড অ্যাকাউন্ট ডিসাবেল হয়ে যায় এবং সেটা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোন অ্যাডও দিতে পারবেন না।

এই সকল বিপত্তি এড়ানো সম্ভব যদি আপনি নিজে বা আপনার অ্যাড যে বা যারা রান করছে তারা অ্যাড পলিসি সম্পর্কে ভালমত জানে। আমাদের দেশের মানুষের চিকন বুদ্ধি এত বেশি যে তারা এই ফেসবুক পলিসিকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করে। এটা হয়ত সাময়িকভাবে অ্যাডটা পার পেয়ে যাবে, কিন্তু যখন ফেসবুক তাদের অ্যাড রিভিউ সিস্টেম পাকাপোক্ত করবে, তখন কিন্তু ধরা খেতে হবে। শেষ হয়ে যাওয়া অ্যাড ও রিজেক্ট করে ফেসবুক, এরকম উদাহরণ ও আছে।

সুতরাং, অ্যাড পলিসি সম্পর্কে জানুন এবং জেনে অনলাইন বিজনেস পরিচালনা করুন।

পুরো লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

নাফিস কাওসার – ফাউন্ডার – Continto 

 

Nafees Kausar

আপনার অনলাইন বিজনেস এর জন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়া কাজে দিবে?

“আমার ইন্সটাগ্রামটা অ্যাক্টিভ নেই”

 

“টিকটকের নাচ গান আমার ভাল লাগে না”

 

“আমার একটা গ্রুপ আছে বাট কিছু করা হয় না”

 

এই ধরণের কথা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই কম বেশী খাটে তাই না?

আজকে কথা বলব অনলাইন বিজনেস এর জন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার একটিভ থাকা প্রয়োজন। আসুন জেনে নেই কিভাবে বুঝবেন কোন সোশ্যাল মিডিয়া আপনার বিজনেস এর জন্য কাজে দিবে।

চোখ যেখানে, আপনি সেখানে

“তুমি যেখানে, আমি সেখানে, তা কি জানো না?” শুনেছেন না এই গানটা? ঠিক এই গানের মত করে আপনার কাস্টমার এর চোখ যেখানে থাকবে আপনাকে সেখানে যেতে হবে।

আসলে ঘটনা হচ্ছে, বিজনেস করতে গেলে অনেক সময় নিজেদের ইচ্ছা, পছন্দ এবং কমফোরট এর বাইরে গিয়ে কিছু না কিছু করতে হয়। ধরেন আপনার ইন্সটাগ্রাম পছন্দ না, বা টিকটক ব্যক্তিগতভাবে আপনি ব্যবহার করেন না, কিন্তু আপনার কাস্টমার যদি ইন্সটাগ্রাম এবং টিকটকে গিয়ে সময় কাটায়, তাহলে কিন্তু আপনারও ওখানে উপস্থিত থাকা দরকার।

সুতরাং আপনি বোঝার চেষ্টা করুন আপনার কাস্টমার কোন ধরণের সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশী ব্যবহার করে। একটা বাস্তব উদাহরণ দেই। আমরা ইউ এস এ এবং ইউরোপের কিছু ক্লায়েন্ট এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর কাজ করি। সেখানে ১৫ থেকে ২৪ বছরের কেউ ফেসবুক তেমন ব্যবহার করে না বললেই চলে। তারা বেশীর ভাগ স্ন্যাপচ্যাট, ইন্সটাগ্রাম এবং টিকটক ব্যবহার করে। সেখানে ফেসবুক ব্যবহার করে মূলত ৩০-৫০ বয়সের মানুষ। ১৫ বছরের কারও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকলেও সেটায় সে একটিভ না। কারণ সেখানে তার ফ্যামিলি মেম্বার আছে, তাদের ফ্রেন্ডলিস্টে রেখে তারা চাইলেই অনেক কিছু পোস্ট করতে পারে না। এই কারণসহ বিভিন্ন কারণে তারা ফেসবুক কম ব্যবহার করে।

এখন আপনি বোঝার চেষ্টা করুন আপনার কাস্টমার কোন ডেমোগ্রাফিতে এবং সেউ অনুযায়ী তার চোখ যেখানে, আপনি সেখানে চলে যাবেন। আপনার মন না চাইলেই যাবেন।

বাংলাদেশের কথা যদি বলি, ইয়াং জেনারেশন ফেসবুকের পাশাপাশি স্ন্যাপচ্যাট, ইন্সটাগ্রাম এবং টিকটক ব্যবহার করে, কিন্তু এখনো ফেসবুক খুবই কমন একটি প্ল্যাটফর্ম আমাদের দেশে। তবে হ্যাঁ বাইরের দেশে যে ট্রেন্ড একবার শুরু হয়, সেটা দেরিতে হলেও আমাদের দেশেও হবে। সুতরাং, বুঝিয়া করিবেন কাজ।

   আপনার প্রোডাক্ট কোন প্ল্যাটফর্ম এর জন্য সেটা বুঝুন

লিঙ্কড ইন এ যেমন জামা সেল হবে না, তেমনি টিকটক দেখে কেউ তার জমির বুকিং দিবে না। আপনি কি ধরণের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনি কোন সোশ্যাল মিডিয়া তে একটিভ থাকবেন।

কিছু প্রোডাক্ট আছে যেগুলো যেকোন সোশ্যাল মিডিয়া এর জন্য প্রযোজ্য। যেমন ফ্যাশন এক্সেসরিজ, জুয়েলারি, শাড়ি, গ্যাজেট আইটেম ইত্যাদি। এবং কিছু কিছু প্রোডাক্ট আছে যেগুলো নির্দিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া এর জন্য বেশী ফিট। আপনার প্রডাক্ট কোন ধরণের কাস্টমার বেশী ব্যবহার করে সেই অনুযায়ী আপনি বাছাই করবেন কোন সোশ্যাল মিডিয়া তে আপনি সময় দিবেন।

মার্কেটিং এ যখন পড়তাম ওখানে একটা টার্ম ছিল “প্রোডাক্ট-মার্কেট ফিট” এখন সেটাকে একটু মডিফাই করে বলতে হচ্ছে “প্রোডাক্ট-মিডিয়া ফিট”। অর্থাৎ যে প্রোডাক্ট যে সোশ্যাল মিডিয়া এর জন্য ফিট তার সেখানে উপস্থিতি থাকা উচিত।

অরগানিক রিচ হাতছাড়া করবেন না

সম্পর্কের প্রথম দিকে যেমন মিল মহব্বত বেশী থাকে, একটা সোশ্যাল মিডিয়া পপুলার হওয়ার সময় প্রথম দিকে তেমন অরগানিক রিচ বেশী থাকে। অরগানিক রিচ বলতে টাকা পয়সা খরচ না করে রেগুলার কন্টেন্ট দিলেই কন্টন্টের প্রচার হয়। আপনার চারপাশে লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন কোন সোশ্যাল মিডিয়া অরগানিক রিচ বেশী দিচ্ছে।

যখন এরকম দেখবেন, তখন সেটার অ্যাডভান্টেজ নেয়ার চেষ্টা করবেন। সেখানে যেভাবে, যেই ফরম্যাটে, যে ডিউরেশন এর কন্টেন্ট দিলে ভাল পারফর্ম করে, সেরকম কন্টেন্ট দিতে থাকবেন এবং অরগানিক রিচ কে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন।

ফার্স্ট মুভার অ্যাডভান্টেজ

যদিও আমাদের দেশে সেরকম সুযোগ নেই, তারপরও যদি দেখেন আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে কেউ কোন একটি নির্দিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়াতে কাজ করছে না, তাহলে সেখানে আপনি কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে এবং এক্টিভ থেকে কিছু অ্যাডভান্টেজ পেতে পারেন। যাকে পড়াশোনার ভাষায় বলে ফার্স্ট মুভার অ্যাডভান্টেজ। যদিও এটি একটি নতুন প্রোডাক্ট কোন নতুন মার্কেটে আসার সাথে সম্পৃক্ত, কিন্তু আমরা সোশ্যাল মিডিয়া এর ক্ষেত্রেও এটা ব্যবহার করতে পারি। যে সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে কেউ কাজ করছে না, সেখানে আপনি শুরু করে ফার্স্ট মুভার অ্যাডভান্টেজ নিতে পারেন।

সবগুলোর মুলে রয়েছে আপানার কাস্টমারকে আপনি কতটুকু চেনেন সেটা। সুতরাং আপনার কাস্টমারকে বোঝার চেষ্টা করুন এবং তাদেরকে বিহেভিওর বুঝে আপনার স্ট্রাটেজি ঠিক করুন।

পুরো লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

নাফিস কাওসার, ফাউন্ডার – Continto

 

Marketing ideas

মার্কেটিং এর ৫টি বিষয় যা ২০২৪ এ খুবই গুরুত্বপূর্ণ

মার্কেটিং বদলায়, কারণে অকারনে বদলায়। ব্যবসায়ের এই পরিবর্তনশীল দিকটির সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে অনেক ব্যবসায় পায় সফলতা এবং তাল হারিয়ে ফেললে জোটে বিফলতা। আগামী ২০২৪ এ মার্কেটিং এর যে ৫টি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে তা নিয়ে আজকের লেখাটি।

১। কন্টেন্ট এর কোয়ালিটিঃ

যদি অনলাইন ব্যবসায়ের কথা চিন্তা করি, সবারই পেইজ আছে এবং আলটিমেটলি সবাই কম বেশী বুস্ট করে তার অনলাইন বিজনেসকে চলমান রাখতে সক্ষম। প্রতিযোগিতামূলক এই বাজারে শুধু অ্যাড রান করে, বাজেট বাড়িয়ে কাস্টমারের মনে এবং পকেটে জায়গা করে নেয়া সহজ হবে না।
আপনি আপনার পেইজে, ওয়েবসাইটে, অ্যাপে কি ধরণের কন্টেন্ট দিচ্ছেন, কি পরিমাণে দিচ্ছেন, কাদের জন্য দিচ্ছেন এবং কাদের নিয়ে দিচ্ছেন এগুলো আরও মুখ্য বিষয় হয়ে উঠবে। কন্টেন্টের কোয়ান্টিটি এবং কোয়ালিটি ২০২৪ এ অনেক গুরুত্ব পাবে। গথবাঁধা একই রকম ছবি দিয়ে, লাইভ করে, ভিডিও দিয়ে আপনার প্রতিযোগিতা থেকে আলাদা হতে পারবেন না, কাস্টমারের মনেও জায়গা করে নিতে পারবেন না। শুধু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ছবি এবং ভিডিও দিতে থাকলে হবে না, অডিয়েন্স কে ভাবাতে হবে, হাসাতে হবে তবে না কান্দালেও চলবে। অডিয়েন্স এর মাথায় থাকার চেষ্টা করবেন, সেটা স্ক্রল করা থামাতে পারে এরকম পরিবেশন দিয়ে হোক, ঢালিউডের নায়কের ডিগবাজি দিয়ে হোক। অডিয়েন্স এর মনোযোগ কাড়বেন, আর টাকা গুনবেন।

২। ইনফ্লূয়েন্সার মার্কেটিংঃ

আগেই বলি, শুধু টপ লেভের কাউকে দিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করার নামই ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং না। এটা ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর একটি অংশ মাত্র। পণ্যের পি আর পাঠানো, পেইড কন্টেন্ট তৈরি, ভিডিও অ্যাড তৈরি, প্রোডাক্ট রিভিউ করানো, কলাবরেশন করানো, লাইভ হোস্ট করানো সব কিছুই ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর অংশ। যে উঠতি, তার পেছনে গণজোয়ার এ নেমে যাওয়াই শুধু না, আপনার প্রোডাক্ট বুঝে, অডিয়েন্স বুঝে একটা পরিকল্পিত অ্যাপ্রোচ নিয়ে আগালে লং টার্মে সফলতা পাবেন। নাহলে এক দুইটা পি আর পাঠিয়ে, আর ট্রেন্ডিং কাউকে দিয়ে লাইভ করিয়ে লাখ টাকার সেল না পেয়ে বলবেন “এগুলো কোন কাজের না”। আমার ক্লায়েন্টদের এবং ট্রেইনিং এর লার্নারদের সব সময় বলি, “সেল এনে দেয়া ইনফ্লুয়েন্সার দের কাজ না, আপনি যদি ভাবেন ৪০ হাজার টাকার লাইভ করিয়ে ২ লাখ টাকার সেল আনব, তাহলে আপনার হিসেবেই ভুল। ইনফ্লুয়েন্সারদের কাজ আপনার ব্র্যাণ্ড এর পরিচিতি বৃদ্ধি করা।
সুতরাং ২০২৪ এ সঠিকভাবে ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কাজ করতে পারলে আপনি লাভবান হবেন, আপনার ব্র্যান্ড পরিচিত লাভ করবে এবং প্রতিযোগিতার মাঝে টিকে থাকতে পারবেন। তবে একটা বিষয় আমরা কাজ করতে গিয়ে লক্ষ্য করেছি সেটা হচ্ছে ইনফ্লুয়েন্সার এবং ক্লায়েন্ট দুই পক্ষের একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকাটা অনেক জরুরী। কন্টেন্ট তৈরি করে একটি জায়গায় পৌঁছানো যেমন কষ্টসাধ্য তেমনি একটি ব্যবসায় পরিচালনা করাও অনেক পরিশ্রমের একটি কাজ। একসাথে একই উদ্দেশ্যে কাজ করতে পারলে সবাই দিনশেষে লাভবান হবেন।

৩। AI এর ব্যবহারঃ

২০২৪ এ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা AI এর ব্যবহার দেখতে পাব। এবং এ আই কে একটি টুল হিসেবেই দেখতে হবে। “আরে চ্যাট জিপিটি তো ৫ মিনিটে লিখে দেয়, কন্টেন্ট রাইটার দিয়ে কি হবে” এই ধারণা রেখে যদি এ আই ব্যবহার করতে থাকেন তাহলে ভুল করবেন। এ আই একটি টুল এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ আই কখনো মানুষের থেকে বেটার হতে পারবে না, দ্রুত হতে পারবে বাট বেটার না। তাই মনে করবেন না একজন এমপ্লয়ি কম রেখে এ আই দিয়ে কাজ চালাতে পারবেন। প্লাস একদম এ আই এড়িয়ে চললেও হবে না। এটি আপনার লাইফ সহজ করবে এবং তার কাজ এতটুকুই, এ আই এর সঠিক ব্যবহার করতে পারলে ২০২৪ এ অনেক আপনার ব্যবসায়ের প্রোডাক্টিভিটি এবং ক্রিয়েটিভিটি দুটিই উন্নত করতে পারবেন।

৪। Personalization/Customization:

বিদেশের ক্লায়েন্টদের জন্য যখন কাজ করি, তখন পার্সোনালাইজড মার্কেটিং এর অনেক কদর দেখতে পাই। অর্থাৎ আপনার অডিয়েন্স কে যতটা তার মত করে, তার ভাষায় এবং তার জন্য কমিউনিকেট করতে পারবেন, আপনার মার্কেটিং এর রিটার্ন তত ভাল হবে। গণ মার্কেটিং হচ্ছে ঢালাওভাবে মার্কেটিং করা আর পার্সোনালাইজড মার্কেটিং হচ্ছে যার জন্য যে কমিউনিকেশন দরকার সেটা করা।
শুধু কমিউনিকেশন না, পার্সোনালাইজড মার্কেটিং প্রোডাক্টের ক্ষেত্রেও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করবে আসন্ন সময়ে। এবং শুধু পার্সোনালাইজড মার্কেটিং না, পার্সোনালাইজড প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস এর চাহিদাও বেশী। পার্সোনালাইজড প্রডাক্ট এর যে সকল ক্লায়েন্ট এর সাথে কাজ করছি, তাদের সব সময়েই সেলস এর একটি ধারা চলতে থাকে। যেটা আগামীতেও থাকবে।

৫। ক্রিয়েটিভ মার্কেটিংঃ

এই বিষয়টা শুধু অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য নয়। বরং বড় বড় কোম্পানি এবং রাইজিং স্টার্ট আপ গুলো এর জন্য বেশী কার্যকরী। ভি এফ এক্স ব্যবহার করে বিভিন্ন ল্যান্ডমার্কে প্রোডাক্ট এর থ্রি ডি প্লেসমেন্ট ইউরোপ, আমেরিকা এবং ইন্ডিয়াতেও বেশ চল উঠেছে। আমাদের দেশে ডমিনজ পিজা এবং আড়ং কে এখন পর্যন্ত এরকম কাজ করতে দেখেছি যা অচিরেই অন্য ব্র্যান্ডগুলোও করবে, আমি মনে করি এই আস্নন বাণিজ্য মেলায় এরকম অনেক চমক আমরা দেখতে পাব।
এছাড়াও মেট্রো রেইল, এলিভেটেড একপ্রেসওয়ে, তিন নম্বর টার্মিনাল ক্রিয়েটিভ মার্কেটিং এর নতুন ধারা যোগ করবে। টিভি, নাটক এবং সিনেমাতেও ধীরে ধীরে এই স্থানগুলো জায়গা করে নিবে এবং তার সাথেই যোগ হবে ক্রিয়েটিভ মার্কেটিং এর মজার খেলা। বেঁচে থাকলে ২০২৪ এ এরকম অনেক ইন্টেরেস্টিং বিষয় দেখা যাবে।
পুরো লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
নাফিস কাওসার – ফাউন্ডার, Continto
Facebook boost, online business, Nafees Kausar

সবাই বুস্ট করলে কাস্টমার কার পণ্য কিনবে

অনলাইন ব্যবসায় দিনে দিনে কঠিন হচ্ছে এবং সামনে আরও হবে। যদি আপনি ভিন্নভাবে আপনার ব্যবসায় এর স্ট্রাটেজি সাজাতে পারেন, তাহলে এরকম একটি প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটে আপনি টিকে থাকতে পারবেন, নাহয় ঝড়ে পরতে হবে। যখন সবাই ব্যবসা শুরু করে বুস্ট করে কাস্টমারের সামনে প্রোডাক্ট নিয়ে যাবে, তখন কাস্টমার কার প্রডাক্টটি কিনবে? আজকে লেখায় আলোচনা করব কিভাবে আপনার অনলাইন বিজনেস প্রতিযোগিতা থেকে আলাদা করবেন।

কি করবেন সেটা বলার আগে বলে নিতে চাই কি করবেন না।

প্রোডাক্টের দাম কমিয়ে দিয়ে ব্যবসা শুরু করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। বেশীর ভাগ অনলাইন বিজনেস এর প্রাইসিং স্ট্রাটেজি হচ্ছে, মার্কেটে যে দামে বিক্রি হচ্ছে এর থেকে কম দামে সেল করা। আমরা যখন বিবিএ, এম বি এ পড়ি তখন আমাদেরকে বিভিন্ন ধরণের প্রাইসিং স্ট্রাটেজি শেখানো হয়, এর মধ্যে একটি হচ্ছে কম্পিটিটিভ প্রাইসিং। কিন্তু আমাদের দেশে ৯০% অনলাইন বিজনেস এই চিন্তার বাইরে যেতেই পারে না।

আপনি যখন প্রাইসিং কমিয়ে ব্যবসা শুরু করছেন তখন আপনি আসলে প্রোডাক্টের ক্ষতি করছেন। মনে করেন একটা প্রডাক্ট যা বাজার মূল্য ২,০০০ টাকায় বিক্রি করছে। আপনি নতুন ব্যবসা শুরু করছেন আপনার ঘর থেকে, কোন ধরণের বড় বিনিয়োগ ছাড়া, অল্প কিছু প্রডাক্ট কিনে। আপনি প্রোডাক্টের প্রাইস রাখলেন ১,৫০০। কয়েকদিন পর আরেকজন অনলাইন ব্যবসায়ে নামল। সে আরও কম প্রোডাক্ট এবং পুঁজি নিয়ে শুরু করল এবং “মার্কেট ধরার” জন্য সে প্রোডাক্টের প্রাইস কমিয়ে দিয়ে করল ১,২০০ টাকা। এখন দেখেন, যে প্রতিষ্ঠান ২,০০০ টাকায় বিক্রয় করত সে কি এখন আগের মত কাস্টমার পাবে? না, কারণ আমাদের দেশের কাস্টমার সব সময় সস্তা খুঁজে।

সুতরাং দাম কমানো অনলাইন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে একমাত্র স্ট্রাটেজি হতেই পারে না। বরং মার্কেটে যে দামে প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে তার কাছা কাছি একটি দাম রেখে প্রাইসিং স্ট্রাটেজি ঠিক করুন।

এখন বলব কিভাবে আপনি প্রতিযোগিতার মাঝে আপনার ব্যবসায়কে ভিন্ন করে তুলতে পারবেন।

১। আপনার পেইজের কন্টেন্ট এর মাধ্যমে

আপনি কিভাবে আপনার পেইজ সাজিয়েছেন, কি কি ধরণের কন্টেন্ট দিচ্ছেন, কি পরিমাণে দিচ্ছেন, প্রোডাক্ট এর পরিবেশন কেমন সেগুলো মুখ্য বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। আমার ট্রেইনিং এ এবং ক্লায়েন্ট দের সব সময় বলি, একটি অ্যাড এর কন্টেন্ট যদি খারাপ হয়, তাহলে টারগেটিং যতই ভাল হোক না কেন, অ্যাড থেকে ভাল ফলাফল আনা অসম্ভব। তাই আপনার পেইজের কন্টেন্ট এর উপর জোর দিন। গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে আসুন।

২। ব্র্যান্ডিং

আপনার লোগো, ফেসবুক পেইজের সেটাপ, ওয়েবসাইটের ইন্টারফেস, পণ্যের প্যাকেজিং, ম্যাসেজের উত্তর, আপনার আফটার সেলস সার্ভিস সবকিছুই ব্র্যান্ডিং এর অংশ। এমনভাবে ব্র্যান্ডিং করুন যাতে আপনার পণ্য অন্যদের থেকে ভিন্ন হয়, যাতে আপনি বেশী দাম রাখলেও আপনার ব্র্যান্ডিং এর কারণে কাস্টমার বেশী দাম দিয়ে কিনতে রাজি থাকে। এমন ভাবে আপনার মার্কেটিং এক্টিভিটি সাজান যাতে আপনি কাস্টমারের টপ অফ মাইন্ড থাকতে পারেন এবং একবার কাস্টমার আপনার থেকে কোন প্রডাক্ট কিনলে যেন আপনার মনে থাকে, একবার একটি পেইজে হুডি অরডার করেছিলাম, তারা একটা হাতে লেখা চিঠি দিয়েছিল। খুজলে এখনো মেবি চিঠিটা পাব। এটি ছোট্ট একটি উদাহরণ ব্র্যান্ডিং এর।

৩। Comfortable হওয়া যাবে না

আপনি অনলাইন ব্যবসায় করলে, “চলছে চলুক”, “হচ্ছে হোক”, “খারাপ তো হচ্ছে না” এসব শব্দ আপনার অভিধান থেকে বের করে ফেলতে হবে। আমরা যারা ৯০ এর দশকের, আমারা অনেকেই ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি চিনি। এক সময় অনেক নাম ডাক থাকলেও, এখন প্রচন্ড প্রতিযোগিতায় আগের সেই জায়গায় আর নেই। আগামী প্রজন্মের অনেকের কাছে অচেনা রয়ে যাবে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি। এর একটি কারণ হচ্ছে they got comfortable! ব্যবসায় করতে গিয়ে তারা মনে করেছে যেমন চলছে, খারাপ না। কোন ধরণের ইনোভেশন, চেঞ্জ, নতুনত্ব কিছুই তারা এম্ব্রেস করেনি, ইভেন একটি লোগো চেঞ্জ বা বাটির ডিজাইনও না। যে কারণে এভাবে চলতে থাকলে কেউ মনে রাখবে না, এক সময়ের এই ব্র্যাণ্ডকে। ঠিক সে রকম, অনলাইন বিজনেস করতে এসে আপনাকে Comfortable হওয়া যাবে না।

একটি প্রোডাক্ট অনেক হিট, আরেকটি প্রোডাক্ট নিয়ে ভাবুন। একজন লাইভ হোসট অনেক ভাল করছে, করুক, সাথে আরেকজনকে রেডি করুন। একটি টার্গেট অডিয়েন্স থেকে ভাল ফলাফল আসছে, আসতে থাকুক, আপনি আরও ১০ টি টার্গেট অডিয়েন্স নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করুন। ফেসবুকে খুব ভাল রেস্পন্স, হোক, ইন্সটগ্রাম টিকটক ও যেন বাদ না যায়! Never get comfortable in online business. নতুনত্ব এবং উদ্ভাবনী কিছু করে যেতে হবে, নাহলে একদিন হারিয়ে যাবে আপনার ব্র্যাণ্ড।

আজকে থেকে ৫ বছর পর সে সকল পেইজই ব্যবসা করতে পারবে যারা গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে ভেসে প্রডাক্ট সিলেক্ট করেনি, যারা কন্টেন্ট মার্কেটিং বুঝেছে এবং সঠিকভাবে করেছে, যারা নিজেদের পেইজটাকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে দাড় করানোর জন্য কষ্ট করেছে, বিনিয়োগ করেছে। এবং যারা কখনো comfortable হয়ে যায়নি, বরং প্রতিনিয়ত নতুন কিছু করে চলেছে, এবং তারাই সফল।
পুরো লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ফাউণ্ডার – Continto
Facebook Boost

ফেসবুক বুস্ট এর পারফর্মেন্স খারাপ হয় যে ৫টি কারণে

ফেসবুকে অ্যাড দেয়ার বা বুস্ট করার অভিজ্ঞতা যাদের আছে, এই লেখাটা তাদের জন্য। বিশেষ করে যারা অনলাইনে বিজনেস করেন এবং নিজের বুস্ট নিজে করেন তারা পুরো লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন, কারণ এই লেখায় আমরা তুলে ধরব কি কি কারণে ফেসবুক বুস্টের পারফর্মেন্স খারাপ হতে পারে।

১। কন্টেন্ট

পেইজের যে পোস্ট বা ভিডিওটি আপনি বিজ্ঞাপনে দিচ্ছেন সেটার উপর আপনার অ্যাড এর পারফর্মেন্স নির্ভর করে। কন্টেন্টের ভাষা, ধরণ, ডিউরেশন, ফরম্যাট সব কিছু অ্যাড এর পারফর্মেন্স এ প্রভাব ফেলে। আপনার কন্টেন্টের কোয়ালিটি যদি খারাপ হয়, বা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে না পারে তাহলে এটা কন্টেন্ট এর ব্যর্থতা।
আপনাকে বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে বুঝতে হবে কোনটায় কাস্টমার ভাল রেসপন্স করছে, এবং কোনটায় করছে না। এই এক্সপেরিমেন্ট থেকে আপনি যে ফলাফল পাবেন সেটার উপর নির্ভর করে আপনাকে কন্টেন্ট নির্বাচন করতে হবে। যদি কন্টেন্ট এর ধরণ জাতের না হয়, তাহলে কাড়ি কাড়ি ডলার দিয়েও সেল আসবে না

২। বার বার অ্যাড এডিট করা

কম করে হলেও ৭০-৮০% ভাগ অনলাইন বিজনেস যারা করেন তারা এই কাজটা করেন। অ্যাড চালু করে ১-২ দিনের মধ্যেই আবার অ্যাড এডিট করতে বসেন। এটা ম্যাগি নডুলস না যে ২ মিনিটে সব হয়ে যাবে। ফেসবুক একটি মেশিন এবং মেশিন কাজ করতে সময় নেয়, ফেসবুক কে আপনার অ্যাড এর জন্য রেজাল্ট নিয়ে আসতে সময় দিতে হবে। বার বার অ্যাড এডিট করলে অ্যাডটি লার্নিং ফেইস থেকে বের হতে বেশী সময় নিবে এবং আপনার কাঙ্খিত ফলাফল আসতেও সময় নিবে।
তাই অ্যাড বার বার এডিট করবেন না, সময় দিন। সময় দিয়ে দেখুন ফলাফল কেমন আসে, এরপর প্রয়োজন হলে অ্যাড এর টারগেটিং এ চেঞ্জ আনবেন।

৩। টারগেটিং ভুল করা

আমার মতে ফেসবুক টার্গেটিং একটি আর্ট এবং সাইন্স এর সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আপনার অডিয়েন্স কে বোঝা, তাদের বিহেভিয়র, পছন্দ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা এবং টারগেটিং এর মাধ্যমে তাদের কাছে অ্যাড পোঁছে দেয়া একটি কষ্ট সাধ্য কাজ। অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা জীবনেও অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করে অ্যাড দেয়নি। পেইজের বুস্ট পোস্ট অপশন থেকে বুস্ট করেই ব্যবসা চালিয়ে আসছে। অ্যাড ম্যানেজার এ ফাংশন এবং অপশন সব বেশী, এগুলো ব্যবহার করলে সঠিকভাবে টারগেটিং করা সহজ হয়ে ওঠে।

এটা ছাড়াও অতিরিক্ত কি ওয়ার্ড ব্যবহার করা, সঠিক টারগেটিং প্যারামিটার ব্যবহার না করা, অডিয়েন্স রিটারগেট না করা এবং সঠিকভাবে কাস্টম অডিয়েন্স ব্যবহার না করতে পেরে অনেকেই ফেসবুক অ্যাড এর সব অপশন গুলো প্রয়োগ করতে পারে না। এগুলো নিজে শিখে প্রয়োগ করলে ভাল ফলাফল আপনি পাবেনই। আমার কোর্সের সকল লার্নারদের আমি নিজে সব টুল আয়ত্তে এনে অ্যাড রান করার পেছনে জোর দেই।

৪। অল্প দিনের এবং অল্প বাজেটের অ্যাড দেয়া

ফেসবুক এর প্রত্যেকটি অ্যাড অবজেক্টিভ এর জন্য রেকমেন্ডেড বাজেট এবং ডিউরেশন থাকে। ছোট উদ্যোক্তারা যারা বুস্ট করেন তারা অনেকেই ২-৩ দিনের জন্য অ্যাড রান করতে চায়, এই ২-৩ দিনের অ্যাডে জীবনেও সেল জেনারেট সম্ভব না, যদি বাজেট বেশী দিয়ে ২-৩ দিনের অ্যাড দিয়ে সেল আনতে পারেন সেটা সৃষ্টিকর্তার কৃপা। কারণ ফেসবুক এর নিয়ম হচ্ছে অ্যাড যত লম্বা সময় ধরে চলবে তত ভাল রেজাল্ট আসবে। আপনি যদি অল্প সময়ের জন্য অ্যাড রান করেন এবং ১-২ ডলার ডেইলি বাজেট দেন তাহলে এই বুস্ট থেকে কোন ফলাফল আশা করা ভুল।
আমি প্রাই বলি, বুস্ট হচ্ছে একটি দোকানের লাইট ফ্যানের মত। আপনার যদি একটি শপিং মলে দোকান থাকত, আপনি কি মাঝে মাঝে লাইট জালাতেন এবং বাকি সময় বন্ধ করে রাখতেন? না! আপনি সব সময় লাইট জালিয়ে রাখতেন, ঠিক তেমনই আপনার ফেসবুক পেইজের বুস্ট অফ থাকা অর্থাৎ হচ্ছে আপনার দোকানের লাইট অফ। সুতরাং অল্প বাজেট হলেও নিয়মিত অ্যাড চালু রাখবেন এবং একেক রকমের অডিয়েন্স টার্গেট করে আগাতে থাকবেন যতদিন পর্যন্ত না মন মত অডিয়েন্স পান।

৫। অ্যাড এবং এক্সপেক্টশনের তারতম্য

এই বিষয়টা একটু বুঝতে হবে। ধরেন আপনি চাচ্ছেন আপনার পেইজে লাইক আসুক, কিন্তু আপনি লাইক এর জন্য অ্যাড না দিয়ে রিচ বাড়ানোর অ্যাড দিলেন। তাতে কিন্তু আপনি যে পোস্টটি ব্যবহার করেছেন সেখানে রিচ বেশী আসবে, কিন্তু এতে আপনার পেইজে লাইক নাও আসতে পারে। কিন্তু আপনি মনে করছেন আপনার পেইজে লাইক কেন বাড়ছে না ইত্যাদি। তাই আপনার বুঝতে হবে আপনি কি চান এবং আপনি যেভাবে অ্যাড দিচ্ছেন সেটা আপনার এক্সপেক্টেশন পূরণ করবে কিনা। আপনি চাবেন একটা, অ্যাড দিবেন আরেকটা, ১-২ দিন অ্যাড রান করে ৪ বার এডিট করে ৬ ডলার খরচ করে বলবেন “ফেসবুক অ্যাড কাজ করছে না” তাহলে তো হল না!
উপরের বিষয়গুলো মনে রাখবেন, বাস্তবে প্রয়োগ করবেন এবং যা করবেন জেনে করবেন বা যে জানে তাকে দিয়ে করাবেন। ধৈর্য সহকারে এই বিষয়গুলো মেনে চলবেন, ইন শা আল্লাহ্‌ ভাল ফলাফল পাবেন।
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ফাউণ্ডার – Continto
Online Business Idea, Business Ideas, Nafees Kausar

আপনি কি মার্কেট ধরছেন নাকি মার্কেট নষ্ট করছেন?

আমাদের দেশে অনলাইন ব্যবসায় শুরু করার সময় কোন প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা শুরু করা উচিত তার একমাত্র এবং অন্যতম মানদণ্ড হচ্ছে, “যে প্রডাক্ট ভাল চলতেসে সেটা”। এই উক্তির পেছনে নেই কোন সংগঠিত রিসার্চ, নেই কোন কংক্রিট ডেটা। শুধুমাত্র লোকমুখে শুনে যে ব্যবসা ভাল চলছে মনে হচ্ছে সেই প্রোডাক্ট প্রথম চয়েসে পরিণত হয়। ভবিষ্যতে আদৌ এই প্রোডাক্ট চলবে কিনা, ডিমান্ড কেমন হবে, প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার কোন সুযোগ আছে কিনা এই ধরণের কোন বিশ্লেষণ করা হয় না। যে কারণে সবাই যে প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছে সেই প্রোডাক্ট নিয়ে শুরু হয় অনলাইন ব্যবসা।

ঘটনা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় দেখেন। যখন কমন একটি প্রডাক্ট নিয়ে ব্যবসা শুরু করা হয় সেখানে আসলে নতুনত্ব আনার তেমন কোন সুযোগ থাকে না। সবাই যে স্টাইলে মার্কেটিং করছে, যে ধরণের অফার দিচ্ছে সেই একই রকমভাবে একই কাজ করে গড়ে উঠে নতুন নতুন পেইজ এবং ব্যবসায়। শুধু সেটা হলেও হত, আসল সমস্যা আসে প্রাইস এর ক্ষেত্রে।

আমাদের দেশের অনলাইন ব্যবসায়ের প্রাইসিং স্ট্রাটেজি একটাই। মার্কেটে যে দামে দিচ্ছে এর থেকে কমে দিব। এর বাইরে আর কোন প্রাইসিং স্ট্রাটেজি নিয়ে কেউ চিন্তার প্রয়োজন মনে করে না। অথচ আমরা যখন বিবিএ এমবিএ করি আমাদেরকে আরও বিভিন্ন ধরণের প্রাইসিং স্ট্রাটেজি শেখানো হয়েছে। যেমনঃ

  • কস্ট প্লাস প্রাইসিংঃ আপনার প্রোডাক্টের খরচের উপর আপনি একটি মার্ক আপ সংযুক্ত করে প্রাইস সেট করবেন।
  • কম্পেটিটিভ প্রাইসিংঃ কম্পিটিশন যে ধরণের প্রাইস চার্জ করছে সেটার মত প্রাইস সেট করা।
  • প্রাইস স্কিমিংঃ প্রথমে অনেক বেশী দাম দিয়ে শুরু করা এবং মার্কেট বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে দাম কমিয়ে আনা।
  • পেনেট্রেশন প্রাইসিংঃ কম্পিটিটিভ মার্কেট ঢোকার জন্য প্রাইসিং কমিয়ে রাখা এবং ধীরে ধীরে পরবর্তীতে প্রাইসিং বাড়িয়ে দেয়া।
  • ভ্যালু বেসড প্রাইসিংঃ অর্থাৎ আপনার প্রডাক্ট বা সার্ভিসে এক্সট্রা ভ্যালু সংযুক্ত করুন এবং সেই অনুযায়ী প্রাইস রাখুন।

দুঃখজনক হলেও আমাদের দেশে অনলাইন ব্যবসায় এর প্রাইসিং স্ট্রাটেজি হচ্ছে “মার্কেট ধরার জন্য কম প্রাইসে দিব”, এই মার্কেট ধরতে গিয়ে আসলে মার্কেট নষ্ট হচ্ছে। কিভাবে? আসেন বলি।

তিনজন ব্যক্তির কথা চিন্তা করেন, তানিয়া, মাইশা এবং জান্নাত।

তানিয়া অনলাইন ব্যবসা করছে ২০১৭ সাল থেকে। আরলি শুরু করায় সহজেই তার অনলাইন ব্যবসায় বড় হতে সময় নেয়নি। প্রতিযোগিতা কম, মার্কেটিং খরচ কম এবং লেগে থেকে কাজ করে যাওয়ার কারণে একটি ভাল অবস্থানে চলে আসে তানিয়ার ব্যবসা। টিম বড় করে ছোট্ট একটা দোকানও নিয়ে নেন ভাল একটি শপিং সেন্টারে। শুধু এক ধরণের প্রোডাক্ট এর রমরমা ব্যবসা করতে থাকে তানিয়া। মনে করি তানিয়া যে প্রোডাক্ট বিক্রয় করে তার দাম ২,০০০ টাকা।

এখন ২০২০ সালে অনলাইন ব্যবসায়ে নামে মাইশা। অনলাইনে বিভিন্ন গ্রুপে দেখেছে অনলাইন ব্যবসা করে অনেক টাকা কামানো সম্ভব। সদ্য ভার্সিটি থেকে বের হয়েই ভেবেছে শুরু করবে নিজের অনলাইন বিজনেস। এবং অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করবে তার ব্যবসা কারণ সে তো মাত্র স্টুডেন্ট। তাই অল্প কিছু প্রডাক্ট নেয় মাইশা, মার্কেটিং বাজেটও অল্প, বয়ফ্রেণ্ড বুস্ট করে দেয়ার আশ্বাস দেয়াতে মনে একটু বল আসে। নেই কোন দোকান, নেই কোন টিম; তাই মাইশা ভাবল দাম কমালেই “মার্কেট ধরা” সম্ভব হবে। তানিয়া যে প্রোডাক্ট ২,০০০ টাকায় বিক্রয় করে সেই একই প্রোডাক্ট মাইশা দাম কমিয়ে বিক্রয় করা শুরু করে ১,৫০০ টাকায়। এবং এখানেও সে স্বল্প প্রফিট করতে সক্ষম হয় কারণ তানিয়া যে বিনিয়োগ এবং যে বড় পরিসরে কাজ করে তার খরচ বাড়িয়ে ফেলেছে, মাইশার সেটা প্রয়োজন নেই। যে প্রডাক্ট আগে তানিয়া ২,০০০ টাকায় বিক্রয় হত, মাইশার কাস্টমার সেটা পাচ্ছে ১,৫০০ টাকায়।

দুই বছর পরে হাউজওয়াইফ জান্নাত নামেন ব্যবসায়ে। ছোট্ট দুই সন্তান এবং ব্যাংক এ চাকরিরত হাসবেন্ড নিয়ে তার ছোট সংসার। নিজের জমানো কিছু টাকা এবং হাসবেন্ড থেকে অল্প কিছু ব্যাক আপ নিয়ে শুরু হয় তার জান্নাত’স বুটিক্স। কিছুটা শখের বশেই নেমেছেন ব্যবসায়। নিজের একটা পরিচয় তৈরি হোক, প্রফিট আসলে আসল, না আসলে নাই। তাই মাইশা যে ধরণের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে সেই ধরণের কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে মার্কেট ধরার জন্য জান্নাত দাম রাখে ১,২০০ টাকা। যেহেতু তার প্রফিট সামান্য হলেই হবে, তাই দাম কমালেই মার্কেট পাবে বলে মনে করল জান্নাত। যে প্রডাক্ট আগে মাইশা ১,৫০০ টাকায় বিক্রয় হত, জান্নাতের কাস্টমার সেটা পাচ্ছে ১,২০০ টাকায়।

সাল ২০২৩, তানিয়ার অনলাইন ব্যবসা এখন আর আগের মত নেই। টিম এর খরচ, দোকান ভাড়া, মার্কেটিং খরচ সব দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। কাস্টমার তার ইনবক্সে ম্যাসেজ দেয়, “আপু এই প্রোডাক্ট জান্নাত’স বুটিক্স পেইজে ১,২০০ টাকায় দেখলাম আপনারটায় বেশী কেন?” উত্তর নেই তানিয়ার কাছে!

উত্তর থাকবে কিভাবে? এভাবে মার্কেট ধরার নামে প্রোডাক্ট এর দাম কমানোর কারণে নষ্ট হচ্ছে অনেক প্রডাক্ট এর মার্কেট। এর প্রধান কারণ হচ্ছে না জেনে, না বুঝে, পরিকল্পনা ছাড়া, ট্রেন্ডে ঝাপিয়ে পরে অনলাইন বিজনেস খুলে ব্যবসায় করার চেষ্টা করার কারণে। যতদিন না আমরা দাম কমিয়ে মার্কেট ধরার টেন্ডেন্সি থেকে বের হতে পারব ততদিন আমাদের এফ কমার্স ফোকাসড অনলাইন বিজনেস এর কোন নিরাপত্তা নেই।

সবাই উদ্যোক্তা, সবাই মার্কেটার, তাহলে ক্রেতা কে? এখন তো পাইকারি বিক্রেতাও চলে আসছে রিটেইল সেল করতে। কিন্তু কেন?! আমাদের দেশে কোন পলিসি বা কাঠামো নেই, হবে কিনা জানিনা, তাই ব্যবসায়ীদের উচিত নিজেদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে দাম কমিয়ে মার্কেট ধরার প্র্যাকটিস বন্ধ করতে হবে। এবং সবাই মিলে এক প্রোডাক্ট এর সেল করার জন্য উঠে পরে লাগলে হবে না। আজকে আপনি দাম কমিয়েছেন, কালকে আরেকজন কমাবে এভাবে নষ্ট হবে আপনাদের প্রোডাক্ট এর মার্কেট।

মার্কেট এ যে প্রাইস আছে, সেরকম কাছাকাছি প্রাইস রাখুন। মার্কেটিং এর ধরণ, অফার, পরিবেশন ইত্যাদির মাধ্যমে কাস্টমার ধরার চেষ্টা করুন। কারণ আমাদের ক্রেতারা খুবই প্রাইস সেনসেটিভ। যেটা কমে পাবে সেটাই নিবে, প্রয়োজনে পরে পস্তাবে তাও আগে বেশী টাকা দিবে না, সুতরাং তাদেরকে এই সুযোগ যত কম দিবেন আপনার বিজনেস এর জন্য তত ভাল হবে

মার্কেট ধরতে গিয়ে মার্কেট নষ্ট করবেন না। জানুন, বুঝুন তারপর ব্যবসায় নামুন।

পুরো লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

নাফিস কাওসার, ফাউন্ডার – Continto