Facebook boost, online business, Nafees Kausar

সবাই বুস্ট করলে কাস্টমার কার পণ্য কিনবে

অনলাইন ব্যবসায় দিনে দিনে কঠিন হচ্ছে এবং সামনে আরও হবে। যদি আপনি ভিন্নভাবে আপনার ব্যবসায় এর স্ট্রাটেজি সাজাতে পারেন, তাহলে এরকম একটি প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটে আপনি টিকে থাকতে পারবেন, নাহয় ঝড়ে পরতে হবে। যখন সবাই ব্যবসা শুরু করে বুস্ট করে কাস্টমারের সামনে প্রোডাক্ট নিয়ে যাবে, তখন কাস্টমার কার প্রডাক্টটি কিনবে? আজকে লেখায় আলোচনা করব কিভাবে আপনার অনলাইন বিজনেস প্রতিযোগিতা থেকে আলাদা করবেন।

কি করবেন সেটা বলার আগে বলে নিতে চাই কি করবেন না।

প্রোডাক্টের দাম কমিয়ে দিয়ে ব্যবসা শুরু করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত। বেশীর ভাগ অনলাইন বিজনেস এর প্রাইসিং স্ট্রাটেজি হচ্ছে, মার্কেটে যে দামে বিক্রি হচ্ছে এর থেকে কম দামে সেল করা। আমরা যখন বিবিএ, এম বি এ পড়ি তখন আমাদেরকে বিভিন্ন ধরণের প্রাইসিং স্ট্রাটেজি শেখানো হয়, এর মধ্যে একটি হচ্ছে কম্পিটিটিভ প্রাইসিং। কিন্তু আমাদের দেশে ৯০% অনলাইন বিজনেস এই চিন্তার বাইরে যেতেই পারে না।

আপনি যখন প্রাইসিং কমিয়ে ব্যবসা শুরু করছেন তখন আপনি আসলে প্রোডাক্টের ক্ষতি করছেন। মনে করেন একটা প্রডাক্ট যা বাজার মূল্য ২,০০০ টাকায় বিক্রি করছে। আপনি নতুন ব্যবসা শুরু করছেন আপনার ঘর থেকে, কোন ধরণের বড় বিনিয়োগ ছাড়া, অল্প কিছু প্রডাক্ট কিনে। আপনি প্রোডাক্টের প্রাইস রাখলেন ১,৫০০। কয়েকদিন পর আরেকজন অনলাইন ব্যবসায়ে নামল। সে আরও কম প্রোডাক্ট এবং পুঁজি নিয়ে শুরু করল এবং “মার্কেট ধরার” জন্য সে প্রোডাক্টের প্রাইস কমিয়ে দিয়ে করল ১,২০০ টাকা। এখন দেখেন, যে প্রতিষ্ঠান ২,০০০ টাকায় বিক্রয় করত সে কি এখন আগের মত কাস্টমার পাবে? না, কারণ আমাদের দেশের কাস্টমার সব সময় সস্তা খুঁজে।

সুতরাং দাম কমানো অনলাইন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে একমাত্র স্ট্রাটেজি হতেই পারে না। বরং মার্কেটে যে দামে প্রোডাক্ট বিক্রি হচ্ছে তার কাছা কাছি একটি দাম রেখে প্রাইসিং স্ট্রাটেজি ঠিক করুন।

এখন বলব কিভাবে আপনি প্রতিযোগিতার মাঝে আপনার ব্যবসায়কে ভিন্ন করে তুলতে পারবেন।

১। আপনার পেইজের কন্টেন্ট এর মাধ্যমে

আপনি কিভাবে আপনার পেইজ সাজিয়েছেন, কি কি ধরণের কন্টেন্ট দিচ্ছেন, কি পরিমাণে দিচ্ছেন, প্রোডাক্ট এর পরিবেশন কেমন সেগুলো মুখ্য বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। আমার ট্রেইনিং এ এবং ক্লায়েন্ট দের সব সময় বলি, একটি অ্যাড এর কন্টেন্ট যদি খারাপ হয়, তাহলে টারগেটিং যতই ভাল হোক না কেন, অ্যাড থেকে ভাল ফলাফল আনা অসম্ভব। তাই আপনার পেইজের কন্টেন্ট এর উপর জোর দিন। গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে আসুন।

২। ব্র্যান্ডিং

আপনার লোগো, ফেসবুক পেইজের সেটাপ, ওয়েবসাইটের ইন্টারফেস, পণ্যের প্যাকেজিং, ম্যাসেজের উত্তর, আপনার আফটার সেলস সার্ভিস সবকিছুই ব্র্যান্ডিং এর অংশ। এমনভাবে ব্র্যান্ডিং করুন যাতে আপনার পণ্য অন্যদের থেকে ভিন্ন হয়, যাতে আপনি বেশী দাম রাখলেও আপনার ব্র্যান্ডিং এর কারণে কাস্টমার বেশী দাম দিয়ে কিনতে রাজি থাকে। এমন ভাবে আপনার মার্কেটিং এক্টিভিটি সাজান যাতে আপনি কাস্টমারের টপ অফ মাইন্ড থাকতে পারেন এবং একবার কাস্টমার আপনার থেকে কোন প্রডাক্ট কিনলে যেন আপনার মনে থাকে, একবার একটি পেইজে হুডি অরডার করেছিলাম, তারা একটা হাতে লেখা চিঠি দিয়েছিল। খুজলে এখনো মেবি চিঠিটা পাব। এটি ছোট্ট একটি উদাহরণ ব্র্যান্ডিং এর।

৩। Comfortable হওয়া যাবে না

আপনি অনলাইন ব্যবসায় করলে, “চলছে চলুক”, “হচ্ছে হোক”, “খারাপ তো হচ্ছে না” এসব শব্দ আপনার অভিধান থেকে বের করে ফেলতে হবে। আমরা যারা ৯০ এর দশকের, আমারা অনেকেই ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি চিনি। এক সময় অনেক নাম ডাক থাকলেও, এখন প্রচন্ড প্রতিযোগিতায় আগের সেই জায়গায় আর নেই। আগামী প্রজন্মের অনেকের কাছে অচেনা রয়ে যাবে ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি। এর একটি কারণ হচ্ছে they got comfortable! ব্যবসায় করতে গিয়ে তারা মনে করেছে যেমন চলছে, খারাপ না। কোন ধরণের ইনোভেশন, চেঞ্জ, নতুনত্ব কিছুই তারা এম্ব্রেস করেনি, ইভেন একটি লোগো চেঞ্জ বা বাটির ডিজাইনও না। যে কারণে এভাবে চলতে থাকলে কেউ মনে রাখবে না, এক সময়ের এই ব্র্যাণ্ডকে। ঠিক সে রকম, অনলাইন বিজনেস করতে এসে আপনাকে Comfortable হওয়া যাবে না।

একটি প্রোডাক্ট অনেক হিট, আরেকটি প্রোডাক্ট নিয়ে ভাবুন। একজন লাইভ হোসট অনেক ভাল করছে, করুক, সাথে আরেকজনকে রেডি করুন। একটি টার্গেট অডিয়েন্স থেকে ভাল ফলাফল আসছে, আসতে থাকুক, আপনি আরও ১০ টি টার্গেট অডিয়েন্স নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করুন। ফেসবুকে খুব ভাল রেস্পন্স, হোক, ইন্সটগ্রাম টিকটক ও যেন বাদ না যায়! Never get comfortable in online business. নতুনত্ব এবং উদ্ভাবনী কিছু করে যেতে হবে, নাহলে একদিন হারিয়ে যাবে আপনার ব্র্যাণ্ড।

আজকে থেকে ৫ বছর পর সে সকল পেইজই ব্যবসা করতে পারবে যারা গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে ভেসে প্রডাক্ট সিলেক্ট করেনি, যারা কন্টেন্ট মার্কেটিং বুঝেছে এবং সঠিকভাবে করেছে, যারা নিজেদের পেইজটাকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে দাড় করানোর জন্য কষ্ট করেছে, বিনিয়োগ করেছে। এবং যারা কখনো comfortable হয়ে যায়নি, বরং প্রতিনিয়ত নতুন কিছু করে চলেছে, এবং তারাই সফল।
পুরো লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ফাউণ্ডার – Continto
Facebook Boost

ফেসবুক বুস্ট এর পারফর্মেন্স খারাপ হয় যে ৫টি কারণে

ফেসবুকে অ্যাড দেয়ার বা বুস্ট করার অভিজ্ঞতা যাদের আছে, এই লেখাটা তাদের জন্য। বিশেষ করে যারা অনলাইনে বিজনেস করেন এবং নিজের বুস্ট নিজে করেন তারা পুরো লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন, কারণ এই লেখায় আমরা তুলে ধরব কি কি কারণে ফেসবুক বুস্টের পারফর্মেন্স খারাপ হতে পারে।

১। কন্টেন্ট

পেইজের যে পোস্ট বা ভিডিওটি আপনি বিজ্ঞাপনে দিচ্ছেন সেটার উপর আপনার অ্যাড এর পারফর্মেন্স নির্ভর করে। কন্টেন্টের ভাষা, ধরণ, ডিউরেশন, ফরম্যাট সব কিছু অ্যাড এর পারফর্মেন্স এ প্রভাব ফেলে। আপনার কন্টেন্টের কোয়ালিটি যদি খারাপ হয়, বা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে না পারে তাহলে এটা কন্টেন্ট এর ব্যর্থতা।
আপনাকে বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে বুঝতে হবে কোনটায় কাস্টমার ভাল রেসপন্স করছে, এবং কোনটায় করছে না। এই এক্সপেরিমেন্ট থেকে আপনি যে ফলাফল পাবেন সেটার উপর নির্ভর করে আপনাকে কন্টেন্ট নির্বাচন করতে হবে। যদি কন্টেন্ট এর ধরণ জাতের না হয়, তাহলে কাড়ি কাড়ি ডলার দিয়েও সেল আসবে না

২। বার বার অ্যাড এডিট করা

কম করে হলেও ৭০-৮০% ভাগ অনলাইন বিজনেস যারা করেন তারা এই কাজটা করেন। অ্যাড চালু করে ১-২ দিনের মধ্যেই আবার অ্যাড এডিট করতে বসেন। এটা ম্যাগি নডুলস না যে ২ মিনিটে সব হয়ে যাবে। ফেসবুক একটি মেশিন এবং মেশিন কাজ করতে সময় নেয়, ফেসবুক কে আপনার অ্যাড এর জন্য রেজাল্ট নিয়ে আসতে সময় দিতে হবে। বার বার অ্যাড এডিট করলে অ্যাডটি লার্নিং ফেইস থেকে বের হতে বেশী সময় নিবে এবং আপনার কাঙ্খিত ফলাফল আসতেও সময় নিবে।
তাই অ্যাড বার বার এডিট করবেন না, সময় দিন। সময় দিয়ে দেখুন ফলাফল কেমন আসে, এরপর প্রয়োজন হলে অ্যাড এর টারগেটিং এ চেঞ্জ আনবেন।

৩। টারগেটিং ভুল করা

আমার মতে ফেসবুক টার্গেটিং একটি আর্ট এবং সাইন্স এর সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আপনার অডিয়েন্স কে বোঝা, তাদের বিহেভিয়র, পছন্দ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা এবং টারগেটিং এর মাধ্যমে তাদের কাছে অ্যাড পোঁছে দেয়া একটি কষ্ট সাধ্য কাজ। অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা জীবনেও অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করে অ্যাড দেয়নি। পেইজের বুস্ট পোস্ট অপশন থেকে বুস্ট করেই ব্যবসা চালিয়ে আসছে। অ্যাড ম্যানেজার এ ফাংশন এবং অপশন সব বেশী, এগুলো ব্যবহার করলে সঠিকভাবে টারগেটিং করা সহজ হয়ে ওঠে।

এটা ছাড়াও অতিরিক্ত কি ওয়ার্ড ব্যবহার করা, সঠিক টারগেটিং প্যারামিটার ব্যবহার না করা, অডিয়েন্স রিটারগেট না করা এবং সঠিকভাবে কাস্টম অডিয়েন্স ব্যবহার না করতে পেরে অনেকেই ফেসবুক অ্যাড এর সব অপশন গুলো প্রয়োগ করতে পারে না। এগুলো নিজে শিখে প্রয়োগ করলে ভাল ফলাফল আপনি পাবেনই। আমার কোর্সের সকল লার্নারদের আমি নিজে সব টুল আয়ত্তে এনে অ্যাড রান করার পেছনে জোর দেই।

৪। অল্প দিনের এবং অল্প বাজেটের অ্যাড দেয়া

ফেসবুক এর প্রত্যেকটি অ্যাড অবজেক্টিভ এর জন্য রেকমেন্ডেড বাজেট এবং ডিউরেশন থাকে। ছোট উদ্যোক্তারা যারা বুস্ট করেন তারা অনেকেই ২-৩ দিনের জন্য অ্যাড রান করতে চায়, এই ২-৩ দিনের অ্যাডে জীবনেও সেল জেনারেট সম্ভব না, যদি বাজেট বেশী দিয়ে ২-৩ দিনের অ্যাড দিয়ে সেল আনতে পারেন সেটা সৃষ্টিকর্তার কৃপা। কারণ ফেসবুক এর নিয়ম হচ্ছে অ্যাড যত লম্বা সময় ধরে চলবে তত ভাল রেজাল্ট আসবে। আপনি যদি অল্প সময়ের জন্য অ্যাড রান করেন এবং ১-২ ডলার ডেইলি বাজেট দেন তাহলে এই বুস্ট থেকে কোন ফলাফল আশা করা ভুল।
আমি প্রাই বলি, বুস্ট হচ্ছে একটি দোকানের লাইট ফ্যানের মত। আপনার যদি একটি শপিং মলে দোকান থাকত, আপনি কি মাঝে মাঝে লাইট জালাতেন এবং বাকি সময় বন্ধ করে রাখতেন? না! আপনি সব সময় লাইট জালিয়ে রাখতেন, ঠিক তেমনই আপনার ফেসবুক পেইজের বুস্ট অফ থাকা অর্থাৎ হচ্ছে আপনার দোকানের লাইট অফ। সুতরাং অল্প বাজেট হলেও নিয়মিত অ্যাড চালু রাখবেন এবং একেক রকমের অডিয়েন্স টার্গেট করে আগাতে থাকবেন যতদিন পর্যন্ত না মন মত অডিয়েন্স পান।

৫। অ্যাড এবং এক্সপেক্টশনের তারতম্য

এই বিষয়টা একটু বুঝতে হবে। ধরেন আপনি চাচ্ছেন আপনার পেইজে লাইক আসুক, কিন্তু আপনি লাইক এর জন্য অ্যাড না দিয়ে রিচ বাড়ানোর অ্যাড দিলেন। তাতে কিন্তু আপনি যে পোস্টটি ব্যবহার করেছেন সেখানে রিচ বেশী আসবে, কিন্তু এতে আপনার পেইজে লাইক নাও আসতে পারে। কিন্তু আপনি মনে করছেন আপনার পেইজে লাইক কেন বাড়ছে না ইত্যাদি। তাই আপনার বুঝতে হবে আপনি কি চান এবং আপনি যেভাবে অ্যাড দিচ্ছেন সেটা আপনার এক্সপেক্টেশন পূরণ করবে কিনা। আপনি চাবেন একটা, অ্যাড দিবেন আরেকটা, ১-২ দিন অ্যাড রান করে ৪ বার এডিট করে ৬ ডলার খরচ করে বলবেন “ফেসবুক অ্যাড কাজ করছে না” তাহলে তো হল না!
উপরের বিষয়গুলো মনে রাখবেন, বাস্তবে প্রয়োগ করবেন এবং যা করবেন জেনে করবেন বা যে জানে তাকে দিয়ে করাবেন। ধৈর্য সহকারে এই বিষয়গুলো মেনে চলবেন, ইন শা আল্লাহ্‌ ভাল ফলাফল পাবেন।
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ফাউণ্ডার – Continto