ফেসবুকে অ্যাড দেয়ার বা বুস্ট করার অভিজ্ঞতা যাদের আছে, এই লেখাটা তাদের জন্য। বিশেষ করে যারা অনলাইনে বিজনেস করেন এবং নিজের বুস্ট নিজে করেন তারা পুরো লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন, কারণ এই লেখায় আমরা তুলে ধরব কি কি কারণে ফেসবুক বুস্টের পারফর্মেন্স খারাপ হতে পারে।
১। কন্টেন্ট
পেইজের যে পোস্ট বা ভিডিওটি আপনি বিজ্ঞাপনে দিচ্ছেন সেটার উপর আপনার অ্যাড এর পারফর্মেন্স নির্ভর করে। কন্টেন্টের ভাষা, ধরণ, ডিউরেশন, ফরম্যাট সব কিছু অ্যাড এর পারফর্মেন্স এ প্রভাব ফেলে। আপনার কন্টেন্টের কোয়ালিটি যদি খারাপ হয়, বা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে না পারে তাহলে এটা কন্টেন্ট এর ব্যর্থতা।
আপনাকে বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে বুঝতে হবে কোনটায় কাস্টমার ভাল রেসপন্স করছে, এবং কোনটায় করছে না। এই এক্সপেরিমেন্ট থেকে আপনি যে ফলাফল পাবেন সেটার উপর নির্ভর করে আপনাকে কন্টেন্ট নির্বাচন করতে হবে। যদি কন্টেন্ট এর ধরণ জাতের না হয়, তাহলে কাড়ি কাড়ি ডলার দিয়েও সেল আসবে না
২। বার বার অ্যাড এডিট করা
কম করে হলেও ৭০-৮০% ভাগ অনলাইন বিজনেস যারা করেন তারা এই কাজটা করেন। অ্যাড চালু করে ১-২ দিনের মধ্যেই আবার অ্যাড এডিট করতে বসেন। এটা ম্যাগি নডুলস না যে ২ মিনিটে সব হয়ে যাবে। ফেসবুক একটি মেশিন এবং মেশিন কাজ করতে সময় নেয়, ফেসবুক কে আপনার অ্যাড এর জন্য রেজাল্ট নিয়ে আসতে সময় দিতে হবে। বার বার অ্যাড এডিট করলে অ্যাডটি লার্নিং ফেইস থেকে বের হতে বেশী সময় নিবে এবং আপনার কাঙ্খিত ফলাফল আসতেও সময় নিবে।
তাই অ্যাড বার বার এডিট করবেন না, সময় দিন। সময় দিয়ে দেখুন ফলাফল কেমন আসে, এরপর প্রয়োজন হলে অ্যাড এর টারগেটিং এ চেঞ্জ আনবেন।
৩। টারগেটিং ভুল করা
আমার মতে ফেসবুক টার্গেটিং একটি আর্ট এবং সাইন্স এর সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আপনার অডিয়েন্স কে বোঝা, তাদের বিহেভিয়র, পছন্দ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা এবং টারগেটিং এর মাধ্যমে তাদের কাছে অ্যাড পোঁছে দেয়া একটি কষ্ট সাধ্য কাজ। অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা জীবনেও অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করে অ্যাড দেয়নি। পেইজের বুস্ট পোস্ট অপশন থেকে বুস্ট করেই ব্যবসা চালিয়ে আসছে। অ্যাড ম্যানেজার এ ফাংশন এবং অপশন সব বেশী, এগুলো ব্যবহার করলে সঠিকভাবে টারগেটিং করা সহজ হয়ে ওঠে।
এটা ছাড়াও অতিরিক্ত কি ওয়ার্ড ব্যবহার করা, সঠিক টারগেটিং প্যারামিটার ব্যবহার না করা, অডিয়েন্স রিটারগেট না করা এবং সঠিকভাবে কাস্টম অডিয়েন্স ব্যবহার না করতে পেরে অনেকেই ফেসবুক অ্যাড এর সব অপশন গুলো প্রয়োগ করতে পারে না। এগুলো নিজে শিখে প্রয়োগ করলে ভাল ফলাফল আপনি পাবেনই। আমার কোর্সের সকল লার্নারদের আমি নিজে সব টুল আয়ত্তে এনে অ্যাড রান করার পেছনে জোর দেই।
৪। অল্প দিনের এবং অল্প বাজেটের অ্যাড দেয়া
ফেসবুক এর প্রত্যেকটি অ্যাড অবজেক্টিভ এর জন্য রেকমেন্ডেড বাজেট এবং ডিউরেশন থাকে। ছোট উদ্যোক্তারা যারা বুস্ট করেন তারা অনেকেই ২-৩ দিনের জন্য অ্যাড রান করতে চায়, এই ২-৩ দিনের অ্যাডে জীবনেও সেল জেনারেট সম্ভব না, যদি বাজেট বেশী দিয়ে ২-৩ দিনের অ্যাড দিয়ে সেল আনতে পারেন সেটা সৃষ্টিকর্তার কৃপা। কারণ ফেসবুক এর নিয়ম হচ্ছে অ্যাড যত লম্বা সময় ধরে চলবে তত ভাল রেজাল্ট আসবে। আপনি যদি অল্প সময়ের জন্য অ্যাড রান করেন এবং ১-২ ডলার ডেইলি বাজেট দেন তাহলে এই বুস্ট থেকে কোন ফলাফল আশা করা ভুল।
আমি প্রাই বলি, বুস্ট হচ্ছে একটি দোকানের লাইট ফ্যানের মত। আপনার যদি একটি শপিং মলে দোকান থাকত, আপনি কি মাঝে মাঝে লাইট জালাতেন এবং বাকি সময় বন্ধ করে রাখতেন? না! আপনি সব সময় লাইট জালিয়ে রাখতেন, ঠিক তেমনই আপনার ফেসবুক পেইজের বুস্ট অফ থাকা অর্থাৎ হচ্ছে আপনার দোকানের লাইট অফ। সুতরাং অল্প বাজেট হলেও নিয়মিত অ্যাড চালু রাখবেন এবং একেক রকমের অডিয়েন্স টার্গেট করে আগাতে থাকবেন যতদিন পর্যন্ত না মন মত অডিয়েন্স পান।
৫। অ্যাড এবং এক্সপেক্টশনের তারতম্য
এই বিষয়টা একটু বুঝতে হবে। ধরেন আপনি চাচ্ছেন আপনার পেইজে লাইক আসুক, কিন্তু আপনি লাইক এর জন্য অ্যাড না দিয়ে রিচ বাড়ানোর অ্যাড দিলেন। তাতে কিন্তু আপনি যে পোস্টটি ব্যবহার করেছেন সেখানে রিচ বেশী আসবে, কিন্তু এতে আপনার পেইজে লাইক নাও আসতে পারে। কিন্তু আপনি মনে করছেন আপনার পেইজে লাইক কেন বাড়ছে না ইত্যাদি। তাই আপনার বুঝতে হবে আপনি কি চান এবং আপনি যেভাবে অ্যাড দিচ্ছেন সেটা আপনার এক্সপেক্টেশন পূরণ করবে কিনা। আপনি চাবেন একটা, অ্যাড দিবেন আরেকটা, ১-২ দিন অ্যাড রান করে ৪ বার এডিট করে ৬ ডলার খরচ করে বলবেন “ফেসবুক অ্যাড কাজ করছে না” তাহলে তো হল না!
উপরের বিষয়গুলো মনে রাখবেন, বাস্তবে প্রয়োগ করবেন এবং যা করবেন জেনে করবেন বা যে জানে তাকে দিয়ে করাবেন। ধৈর্য সহকারে এই বিষয়গুলো মেনে চলবেন, ইন শা আল্লাহ্ ভাল ফলাফল পাবেন।
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।