কয়েক মাস আগে মালায়শিয়ার Lungkawi থেকে সিটিতে আসার জন্য একটি ফ্লাইট বুক করেছিলাম। এয়ারপোর্টে গিয়ে পরলাম মহা বিপদে। দেখি আমাদের ফ্লাইটের সাথে লাগেজ এর অপশননেই, শুধু হ্যান্ড ক্যারি নেয়া যাবে। এদিকে আমাদের সাথে বড় বড় তরতাজা দুটি লাগেজ। এবং প্লেইন বোর্ডিং এর সময় ১০ মিনিটের মত হাতে আছে। অন্য কোন উপায় না পেয়ে দুইটি লাগেজের একটা মোটা অঙ্কের টাকা অতিরিক্ত দিয়ে সেগুলো প্লেইনে ওঠানো সম্ভব হয়েছিল। এই ঘটনাটা কেন বললাম জানেন? অনেকেই অনলাইন বিজনেস শুরু করে, অনলাইন বিজনেস এর নিয়ম না জেনেই। যেহেতু ফেসবুক অনলাইন বিজনেস এর প্রচারের অন্যতম একটি মাধ্যম, এই প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করার আগে অবশ্যই এর নিয়ম কানুন জেনে নামা উচিত। নাহলে আমার মত ভুল করতে হবে, দিতে হবে অনেক রকমের মাশুল। আসেন জেনে নেই, ফেসবুক অ্যাড পলিসি সম্পর্কে না জানলে কি কি মাশুল দিতে হতে আপনাকে।
১। অ্যাড রিজেক্ট হওয়াঃ
ফেসবুক এর অ্যাড পলিসি হচ্ছে মূলত নিশ্চিত করে প্রতিটি পেইজ গুণগত মানসম্পন্ন অ্যাড যেন ফেসবুকে দেয়। এমন কোন প্রোডাক্ট, সেবা, ভাষা, ছবি বা ভিডিও যেন ব্যবহার না করা হয় যেটা শোভনীয় নয় বা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। অর্থাৎ যে অ্যাড ফেসবুকের পলিসি অনুযায়ী দেয়া হবে না, সেই অ্যাড ফেসবুক রিজেক্ট করে দিবে। রিজেক্ট করে দেয়ার অর্থ হল, এই ছবি, ভিডিও, লেখা ব্যবহার করে এই অ্যাড আর দেয়া যাবে না, যদি বার বার দেয়, বার বার রিজেক্ট করবে। অর্থাৎ ফেসবুকে সঠিকভাবে অ্যাড দেয়ার জন্য আপনার অবশ্যই অ্যাড এর পলিসি জানতে হবে, যদি না জেনে অ্যাড দেন সেক্ষেত্রে আপনার অ্যাড রিজেক্ট হবে। অল্প পরিমাণে অ্যাড রিজেক্ট হলে সেটা সহনীয়, কিন্তু অনেক পরিমাণে অ্যাড রিজেক্ট ডেকে আনতে পারে বিপত্তি। কি বিপত্তি? পরের পয়েন্টটা দেখুন।
২। পেইজ রেস্ট্রিক্টেশনঃ
পেইজ রেস্ট্রিকশন হওয়া মানে, আপনি ঐ ফেসবুক পেইজ দিয়ে সব কিছু করতে পারবেন, শুধু অ্যাড দিতে পারবেন না। পোস্ট করতে পারবেন, ম্যাসেজ দিতে পারবেন, লাইভে আসতে পারবেন কিন্তু অ্যাড বা বুস্ট দিতে পারবেন না।
একটা পেইজ রেস্ট্রিক্টেড হওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে অনেক বেশী পরিমাণ অ্যাড রিজেক্ট হওয়া। মনে করেন আপনি নতুন ফেসবুক পেইজ খুলেছেন এবং আপনি ফেসবুক অ্যাড পলিসি সম্পর্কে না জেনেই মনের মাধুরি মিশিয়ে অনেকগুলো অ্যাড দেয়ার চেষ্টা করলেন, বার বার একই ভুল করতে থাকলেন, এতে করে আপনার পেইজ রেস্ট্রিক্টেড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
শুধু তাই নয়, আমরা যেহেতু অনেক ক্লায়েন্ট নিয়ে কাজ করি, এরকম অনেককে পেয়েছি লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রডাক্ট ষ্টক করেছে, অথচ ঐ ধরণের প্রোডাক্ট ফেসবুকে সেল করাই অ্যালাউড না! যদি তারা ফেসবুক এর পলিসি জেনে ব্যবসা শুরু করত, তাহলে এই দিন তাদের দেখা লাগত না।
এছাড়াও, অনেকের বার বার লম্বা সময় ধরে অনেক পরিমাণ অ্যাড রিজেক্ট হওয়াতে রেস্ট্রিক্টেড হয়ে গিয়েছে তিলে তিলে গড়ে তোলা পেইজগুলো।
৩। অ্যাড অ্যাকাউন্ট ডিসাবেল
প্রতিটি ফেসবুক পেইজ একটি অ্যাড অ্যাকাউন্টের সাথে লিংক করা থাকে অটো। যখন পেইজের অ্যাড রিজেক্ট হয়, সেটার প্রভাব গিয়ে পরে পেইজের উপর এবং অ্যাড অ্যাকাউন্টের উপর।
বার বার এবং বেশী পরিমাণে যখন কোন অ্যাড অ্যাকাউন্টের সাথে যুক্ত থাকা পেইজে অ্যাড রিজেক্ট হতে থাকে তখন সেটা সেই অ্যাড অ্যাকাউন্টের হেলথ এর জন্য খারাপ। যদি এটার পরিমাণ বেড়ে যায় তখন অ্যাড অ্যাকাউন্ট ডিসাবেল হয়ে যায় এবং সেটা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোন অ্যাডও দিতে পারবেন না।
এই সকল বিপত্তি এড়ানো সম্ভব যদি আপনি নিজে বা আপনার অ্যাড যে বা যারা রান করছে তারা অ্যাড পলিসি সম্পর্কে ভালমত জানে। আমাদের দেশের মানুষের চিকন বুদ্ধি এত বেশি যে তারা এই ফেসবুক পলিসিকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করে। এটা হয়ত সাময়িকভাবে অ্যাডটা পার পেয়ে যাবে, কিন্তু যখন ফেসবুক তাদের অ্যাড রিভিউ সিস্টেম পাকাপোক্ত করবে, তখন কিন্তু ধরা খেতে হবে। শেষ হয়ে যাওয়া অ্যাড ও রিজেক্ট করে ফেসবুক, এরকম উদাহরণ ও আছে।
সুতরাং, অ্যাড পলিসি সম্পর্কে জানুন এবং জেনে অনলাইন বিজনেস পরিচালনা করুন।
পুরো লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
নাফিস কাওসার – ফাউন্ডার – Continto