“আমার ইন্সটাগ্রামটা অ্যাক্টিভ নেই”
“টিকটকের নাচ গান আমার ভাল লাগে না”
“আমার একটা গ্রুপ আছে বাট কিছু করা হয় না”
এই ধরণের কথা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই কম বেশী খাটে তাই না?
আজকে কথা বলব অনলাইন বিজনেস এর জন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার একটিভ থাকা প্রয়োজন। আসুন জেনে নেই কিভাবে বুঝবেন কোন সোশ্যাল মিডিয়া আপনার বিজনেস এর জন্য কাজে দিবে।
চোখ যেখানে, আপনি সেখানে
“তুমি যেখানে, আমি সেখানে, তা কি জানো না?” শুনেছেন না এই গানটা? ঠিক এই গানের মত করে আপনার কাস্টমার এর চোখ যেখানে থাকবে আপনাকে সেখানে যেতে হবে।
আসলে ঘটনা হচ্ছে, বিজনেস করতে গেলে অনেক সময় নিজেদের ইচ্ছা, পছন্দ এবং কমফোরট এর বাইরে গিয়ে কিছু না কিছু করতে হয়। ধরেন আপনার ইন্সটাগ্রাম পছন্দ না, বা টিকটক ব্যক্তিগতভাবে আপনি ব্যবহার করেন না, কিন্তু আপনার কাস্টমার যদি ইন্সটাগ্রাম এবং টিকটকে গিয়ে সময় কাটায়, তাহলে কিন্তু আপনারও ওখানে উপস্থিত থাকা দরকার।
সুতরাং আপনি বোঝার চেষ্টা করুন আপনার কাস্টমার কোন ধরণের সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশী ব্যবহার করে। একটা বাস্তব উদাহরণ দেই। আমরা ইউ এস এ এবং ইউরোপের কিছু ক্লায়েন্ট এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর কাজ করি। সেখানে ১৫ থেকে ২৪ বছরের কেউ ফেসবুক তেমন ব্যবহার করে না বললেই চলে। তারা বেশীর ভাগ স্ন্যাপচ্যাট, ইন্সটাগ্রাম এবং টিকটক ব্যবহার করে। সেখানে ফেসবুক ব্যবহার করে মূলত ৩০-৫০ বয়সের মানুষ। ১৫ বছরের কারও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকলেও সেটায় সে একটিভ না। কারণ সেখানে তার ফ্যামিলি মেম্বার আছে, তাদের ফ্রেন্ডলিস্টে রেখে তারা চাইলেই অনেক কিছু পোস্ট করতে পারে না। এই কারণসহ বিভিন্ন কারণে তারা ফেসবুক কম ব্যবহার করে।
এখন আপনি বোঝার চেষ্টা করুন আপনার কাস্টমার কোন ডেমোগ্রাফিতে এবং সেউ অনুযায়ী তার চোখ যেখানে, আপনি সেখানে চলে যাবেন। আপনার মন না চাইলেই যাবেন।
বাংলাদেশের কথা যদি বলি, ইয়াং জেনারেশন ফেসবুকের পাশাপাশি স্ন্যাপচ্যাট, ইন্সটাগ্রাম এবং টিকটক ব্যবহার করে, কিন্তু এখনো ফেসবুক খুবই কমন একটি প্ল্যাটফর্ম আমাদের দেশে। তবে হ্যাঁ বাইরের দেশে যে ট্রেন্ড একবার শুরু হয়, সেটা দেরিতে হলেও আমাদের দেশেও হবে। সুতরাং, বুঝিয়া করিবেন কাজ।
আপনার প্রোডাক্ট কোন প্ল্যাটফর্ম এর জন্য সেটা বুঝুন
লিঙ্কড ইন এ যেমন জামা সেল হবে না, তেমনি টিকটক দেখে কেউ তার জমির বুকিং দিবে না। আপনি কি ধরণের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনি কোন সোশ্যাল মিডিয়া তে একটিভ থাকবেন।
কিছু প্রোডাক্ট আছে যেগুলো যেকোন সোশ্যাল মিডিয়া এর জন্য প্রযোজ্য। যেমন ফ্যাশন এক্সেসরিজ, জুয়েলারি, শাড়ি, গ্যাজেট আইটেম ইত্যাদি। এবং কিছু কিছু প্রোডাক্ট আছে যেগুলো নির্দিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া এর জন্য বেশী ফিট। আপনার প্রডাক্ট কোন ধরণের কাস্টমার বেশী ব্যবহার করে সেই অনুযায়ী আপনি বাছাই করবেন কোন সোশ্যাল মিডিয়া তে আপনি সময় দিবেন।
মার্কেটিং এ যখন পড়তাম ওখানে একটা টার্ম ছিল “প্রোডাক্ট-মার্কেট ফিট” এখন সেটাকে একটু মডিফাই করে বলতে হচ্ছে “প্রোডাক্ট-মিডিয়া ফিট”। অর্থাৎ যে প্রোডাক্ট যে সোশ্যাল মিডিয়া এর জন্য ফিট তার সেখানে উপস্থিতি থাকা উচিত।
অরগানিক রিচ হাতছাড়া করবেন না
সম্পর্কের প্রথম দিকে যেমন মিল মহব্বত বেশী থাকে, একটা সোশ্যাল মিডিয়া পপুলার হওয়ার সময় প্রথম দিকে তেমন অরগানিক রিচ বেশী থাকে। অরগানিক রিচ বলতে টাকা পয়সা খরচ না করে রেগুলার কন্টেন্ট দিলেই কন্টন্টের প্রচার হয়। আপনার চারপাশে লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন কোন সোশ্যাল মিডিয়া অরগানিক রিচ বেশী দিচ্ছে।
যখন এরকম দেখবেন, তখন সেটার অ্যাডভান্টেজ নেয়ার চেষ্টা করবেন। সেখানে যেভাবে, যেই ফরম্যাটে, যে ডিউরেশন এর কন্টেন্ট দিলে ভাল পারফর্ম করে, সেরকম কন্টেন্ট দিতে থাকবেন এবং অরগানিক রিচ কে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন।
ফার্স্ট মুভার অ্যাডভান্টেজ
যদিও আমাদের দেশে সেরকম সুযোগ নেই, তারপরও যদি দেখেন আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে কেউ কোন একটি নির্দিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়াতে কাজ করছে না, তাহলে সেখানে আপনি কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে এবং এক্টিভ থেকে কিছু অ্যাডভান্টেজ পেতে পারেন। যাকে পড়াশোনার ভাষায় বলে ফার্স্ট মুভার অ্যাডভান্টেজ। যদিও এটি একটি নতুন প্রোডাক্ট কোন নতুন মার্কেটে আসার সাথে সম্পৃক্ত, কিন্তু আমরা সোশ্যাল মিডিয়া এর ক্ষেত্রেও এটা ব্যবহার করতে পারি। যে সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে কেউ কাজ করছে না, সেখানে আপনি শুরু করে ফার্স্ট মুভার অ্যাডভান্টেজ নিতে পারেন।
সবগুলোর মুলে রয়েছে আপানার কাস্টমারকে আপনি কতটুকু চেনেন সেটা। সুতরাং আপনার কাস্টমারকে বোঝার চেষ্টা করুন এবং তাদেরকে বিহেভিওর বুঝে আপনার স্ট্রাটেজি ঠিক করুন।
পুরো লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
নাফিস কাওসার, ফাউন্ডার – Continto